শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন
করোনার প্রভাব পশু ব্যবসায় আতঙ্কে কেরাণীগঞ্জের খামারীরা
শামীম আহমেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক, কেরাণীগঞ্জ : বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থণীতির বিভিন্ন সেক্টরে। এর প্রভাবে লোকসানের আতঙ্কে প্রহর গুণছে কেরাণীগঞ্জের পশুব্যবসায়ীরাও। আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে লোকসানের আতঙ্কে রয়েছেন কেরাণীগঞ্জের প্রায় সাড়ে সাত শতাধিক পেশাদার খামারী। সরেজমিন বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে এমন তথ্যই উঠে এসেছে খামার মালিকদের পক্ষ থেকে।
তাদের দাবি, প্রতিবছর এ ঈদকে সামনে রেখে ঠিক এই সময়ে অন্তত ৭০ ভাগ পশু বিক্রি হয়ে গেলেও এবছর এখন পর্যন্ত শতকরা ৩০ ভাগ পশুও বিক্রয় হয়নি তাদের। এতেকরে লাভের পরিবর্তে লোকসানের আশঙ্কাই করছেন এখানকার খামারীরা।
কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধিন কালিন্দী এলাকার সামায়ারা এগ্রোর মালিক মো. আবু বকর ফরহাদ বলেন, অন্যান্য বছর এসময় রাজধানী ও তার আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও গ্রাহকরা আসতেন। এবছর এই সময় তাদের কোন খবর নাই। ধারনা করা হচ্ছে করোনার কারনে তারা হয়তো গরু ক্রয় করবেন না। এছাড়া কেরানীগঞ্জ ও এর আশেপাশের লোকজনও এখন পর্যন্ত আসছেন না। তারমতে গত বছর কিংবা তার আগের বছরগুলোতে যারা ৮/১০টা গরু কিনতেন এবার তারা নিচ্ছে ২টা থেকে ৪টা। বেড়েছে পশু খাদ্যের দামও। লকডাউনের কারনে পশু খাদ্য সংগ্রহ করতেও তাদেরকে অনেক কষ্ট শিকার করতে হয়েছে বলেও জানান তরুন এই খামারী।
জানাযায়,আবু বকর ফরহাদ ২০২০সালে মাত্র ৪টা গরু দিয়ে প্রথমে এ ব্যবসা শুরু করেন। যা ২০০৪ সালে বেড়ে গিয়ে দাড়ায় ২৪/২৫টায়। এরপর আস্তে আস্তে আজ তার সামায়রা-১,সামায়রা-২ ও সামায়রা-৩ এই তিনটি খামারে রূপ নিয়েছে। যেখানে এবার বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৪ শতাধিক পশু রয়েছে। এরমধ্যে অষ্ট্রেলিয়ান,দেশী, ক্রস, হাসা, ব্রাহামা, সিজিয়ান, হাসা ও চায়না মহিষসহ অনেক উন্নত প্রজাতির পশু রয়েছে। যার মধ্যে অন্তত ১০/১২লাখ টাকা মূল্যের পশুও রয়েছে তার খামারে। কিন্তু ক্রেতা উপস্থিতি কম হওয়ার কারনে এবার তার ব্যবসা নিয়ে চরম আতঙ্কিত তরুন এই উদ্যোক্তা ।
রোহিতপুরের পোড়াহাটি এলাকার ফিট এন্ড ফ্রেশ এগ্রোর ম্যানেজার মো. হিমেল খান জানান, প্রতিবছর এসময় রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রাহকরা এসে তাদের খামারে ভীর জমাতেন। একেকজন ৫/৭টি গরু ক্রয় করে নিয়ে যেতেন। এবছর এখনও পর্যন্ত তাদের দেখা মিলছেনা। এই সময়ের মধ্যে তাদের খামারের বেশিরভাগ গরু বিক্রি হয়ে যেত। কিন্তু করোনার কারনে আজ দেশে যে অর্থনৈতিক ধ্বস নেমেছে তার প্রভাব তাদের খামারগুলোতেও পড়েছে বলেও মন্তব্য তার। তাই তারা এবছর লাভের চেয়ে লোকসানের আশঙ্কাই বেশি করছেন।
জানাযায়, প্রতিবছর কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় কোরবানীর পশু মোটা-তাজা করন করা হয়ে থাকে। তবে মহামারি করোনার কারনে এবার কোন মৌসুমী পশু ব্যবসায়ী নেই বল জানিয়েছে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা। তারমতে এবার যারা গরু পুষছেন তারা সকলেই পেশদার খামারী। এসব পশু পালকদের খামারে দেশীয় গরুর পাশা পাশি রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-নেপাল ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের গরু। খামারসূত্রে জানাযায,এখানে শাহী, আসামী, ক্রস, বইল,দেশি, আমেরিকান ব্রাহামা, অস্ট্রেয়িান, ফিজিয়ান, হুলবডি, কষ্টাল, বাহুবলী, গয়াল ও ইন্ডিয়ান বলদসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের গরুরয়েছে। এছাড়া খামারগুলোতে দেশি ও চায়নার অনেক মহিষও রয়েছে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী এখানকার গরুখামারীদের মধ্যে রয়েছে সামায়রা এগ্রোভেট,শরীফ এগ্রোভেট, আলম ডেইরী ফার্ম, ফিট এন্ড ফ্রেশ এগ্রো,শাহজালাল ডেইরী ফার্ম, আনোয়ার হোসেন, আলী আহম্মেদ ডেইরীর নাম উল্লেখযোগ্য।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসসুত্র জানায় ঊল্লেখিত খামার সমূহসহ কেরাণীগঞ্জে এবছর ছোট-বড় ৭৪৭টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে কোরবানির জন্য ১০৫৬০টি গরু ও ১৫৮০টি বিভিন্ন প্রজতির ছাগল মোটা-তাজা করন করে রাখা হরয়েছে। যা কেরাণীগঞ্জ বাসীর কোরবানীর পশুর চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
উপজেলা প্রণীসম্পদসূত্র জানায়, খামার গুলোতে সম্পুর্ন অরগানিক পদ্ধতিতে পশু লালন-পালন করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন। তাদের মতে খামারীরা তাদের পশু গুলোকে সবুজ ঘাস, খর-কুটো, খৈল, ভুষি ও বিভিন্ন শস্য দানাদার খাবার খাইয়ে মোটা-তাজা করন করছেন। এখানে কোন প্রকার ষ্টেরয়েড ইনজেকশন অথবা অন্য কোন ঔষধ ব্যবহার করে পশু মোটা-তাজা করন করা হয়নি। পশু পরিচর্যার জন্য খামারগুলোতে রয়েছে একাধিক রাখাল। তারা দিন-রাতে খামারের পশুগুলোকে দেখভাল করে থাকে। এসকল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাযায়,তারা কৃত্রিম উপায়ে গরু-ছাগল মোটাতাজা না করে ভালো খাবার ও যত্নের সাথে লালন পালন করে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের পশুকে বেশী দামে বিক্রয়ের জন্য লোভনীয় করে তোলেন। সেজন্য তাদের রয়েছে নিয়মিত পশু চিকিৎসকও। তারা সার্বক্ষনিক পশুগুলোকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জহির উদ্দীন বলেন, করোনার কারনে অনেক মানুষ এবার কোরবানি দিবেন না । তাই খামারীরা আগে থেকেই লোকসানের আশংকা করছেন। তবে এবারমৌসুমী খামারী না থাকার কারনে শেষ পর্যন্ত এসকল খামারের কোন পশুই অবিক্রিত থাকবেনা বলেও মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। তারপরও একধরনের শংকাই বিরাজ করছে খামারীদের মনে।